আজ বসব কাল বসব করে করে আর পড়তে বসা হয় না। বা পড়তে বসা হলেও কোনো নির্দিষ্ট বিষয়, বাড়ির কাজ আর শুরু করা হয়ে উঠে না। আলসেমি লাগে। ভয় লাগে। গা ম্যাজ ম্যাজ করে, ভালো লাগে না। এরকম অলসতা আমার অনেক হতো। এখনো হয়। বেশ ভালো রকমের খারাপ অভ্যাস এটা। এর জন্য লাইফে অনেক কিছু হারাতে হয়। পস্তাতে হয়। আমার জীবনে যা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝছি। তোমরা যেন এই কষ্টটা না করো তা নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন। গত পর্বে আমরা দেখেছিলাম কিছু ফাঁদ, যার জন্য এমন হয়। আজকে থেকে আমরা আলোচনা করব এই ফাঁদগুলো থেকে বাঁচার বিভিন্ন কলাকৌশল।

👉🏻 কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করো ও নিজেকে পুরস্কার দাও (Solar Flaring Technique)

  • কাজ একটু কঠিন হলে আমরা কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে একটা মানসিক বাধা অনুভব করি। আরে বাপরে, কাজটা অনেক কঠিন অনেক বড়, অনেক সময় লাগবে, অনেক কষ্ট করা  লাগবে—এই ভাবনা থেকে আমরা কোনো কাজ শুরু করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলি।
  • তাই কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করো। এত ছোট, যা করতে তেমন কষ্ট হয় না।
  • এখন শুধু এই ছোট কাজটাই করতে হবে, এটাই তোমার চূড়ান্ত লক্ষ্য এমন ভাবো।
  • একটা ছোট অংশ করে ফেললে দেখবে, ভালো লাগবে। পরের ছোট অংশ করার আগ্রহ পাবে। একটা ছোট অংশ করে ফেলার পর নিজেকে কিছু পুরস্কার দিতে পারো। যেমন- যেটা খেতে পছন্দ করো সেটা খেলে, ১০ মিনিট একটু খেললে এমন। তবে সব সময় নিজেকে পুরস্কার দিবে না। তাহলে ব্রেইন পুরস্কারের লোভে পড়ে যাবে। পরে পুরস্কার দিতে না পারলে বা পুরস্কার নেই এমন কোনো কাজ সে আর করতে চাইবে না।

যেমন ধরো, তোমার গণিত বইয়ের এক চ্যাপ্টারে ১০টা অংক হোমওয়ার্ক দিয়েছে। তোমার ১টা অংক করতেও ইচ্ছা করছে না। তুমি কাজগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নাও এভাবে—

১। খাতা-কলম ক্যালকুলেটর নিয়ে টেবিলে বসব।

২। ফোন অফ করে দূরে রাখব।

৩। গণিত বই বের করে প্রথম অংকটা একবার রিডিং পড়ব।

৪। প্রশ্নে দেওয়া প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো খাতায় লিখব।

৫। দুই লাইন অংক করব…

আশা করি সিস্টেম ধরতে পেরেছ। এভাবে করে দেখো। কাজে অলসতা আসবে না ইনশাআল্লাহ।

👉🏻 ৫ মিনিট রুল

  • কোনো কাজ এখন/আজকে শুরু করতে ভালো লাগছে না, হাতে সময় নেই, অনেক কাজ আছে…। ঠিক আছে, আজকে পুরোটা কাজ করবে না, শুধু ৫ মিনিট কাজ করবে। ৫ মিনিট কাজ করার সময় তো তোমার আছে, তাই না? আর ৫ মিনিট কাজ করলে কীই-বা এমন কষ্ট হয়!
  • ৫ মিনিট কাজ করতে না পারলেও কাজটা নিয়ে জাস্ট বসে থাকবে। ৫ মিনিট কাজ নিয়ে বসে থাকলেই দেখবে আরও অনেকক্ষণ কাজ করতে পারবে। আসলে অলসতা করে করে কাজ না করার ফলে আমাদের মাঝে একটা জড়তা চলে আসে। আমরা এই জড়তা বা স্থিতিশীল অবস্থা ভেঙে গতিশীল হতে চাই না। ৫ মিনিটের এই অল্প কাজও আমাদের এই জড়তা ভেঙে দিয়ে গতিশীল করে তুলতে সাহায্য করে।
  • এই নিয়ম অনুসরণ করলে খুব কঠিন কাজও শুরু করে ফেলতে পারবে ইনশাআল্লাহ। রিসার্চ দ্বারা প্রমাণিত যে, মানুষ এভাবে সাধারণত কোনো কাজ শুরু করলে তা শেষ করে ফেলতে চায়। কাজ শুরুর পূর্বে হয়তো মনে হচ্ছিল এই কাজটা খুবই বিরক্তিকর, কষ্টদায়ক কিছু একটা হবে। কিন্তু কাজ শুরুর পর মানুষ মজা পেতে শুরু করে। আফসোস করে, ইশ! আজ করব কাল করব এমন না করে আমি কেন আগে কাজটা শুরু করলাম না!

👉🏻 এই কাজ করব, নইলে কিছুই করব না

  • ঘড়িতে টাইমার অন করো। ৩০ মিনিট বা ৪০ মিনিটের একটা টাইমার সেট করো।
  • এ সময় যে কাজে তোমার অলসতা হয়, নির্দিষ্ট সে কাজটি করবে অথবা আর কোনো কিছুই করবে না। ফোন চাপাচাপি করবে না। কারও সাথে গল্প করবে না। কথা বলবে না।  মানে কিছুই না… স্রেফ বসে থাকবে, জায়গা ছেড়ে উঠবেও না।
  • দেখবে, যতই মন না চাক, কাজ করতে ভালো না লাগুক, কিছুক্ষণ পর তুমি কাজ করা শুরু করেছ।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। সামনের পর্বে ইনশাআল্লাহ আরও অনেক নতুন নতুন টিপস নিয়ে হাজির হব।

[ষোলো সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত]