দুই.

কেন সবসময় আমার এত টেনশন হয়?[1] মানুষ আমাকে নিয়ে কী ভাববে, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে, আমার কণ্ঠস্বর কেমন শোনাচ্ছে এসব নিয়ে চিন্তা হয়?

টেনশন বা উদ্বেগ মোটের ওপর খারাপ কিছু না! হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের ব্রেইনের একটা অংশ এই টেনশনের কাজ করে যাচ্ছে আমাদেরই সুরক্ষার জন্য। ধরো, খুব ব্যস্ত রাস্তা। হুশহাশ করে গাড়ি যাচ্ছে। রাস্তার ওপাশে নান্না মিয়ার বিরিয়ানির দোকান। তুমি কি বিরিয়ানি খাবার নেশায় চোখ-কান বুজে বাস-ট্রাক আসছে কি আসছে না তার কোনো  পরোয়া না করে রাস্তা পার হবে?

- না, কারণ ব্রেইনের ওই যে ওই টেনশন/উদ্বেগ সৃষ্টিকারী অংশ তোমার মধ্যে বাস চাপা পড়ার একটা টেনশন/ভয় তৈরি করবে। ফলে তুমি বেপরোয়া হলেও খুব বেশি ঝুঁকি না নিয়ে একটু হলেও দেখেশুনে রাস্তা পার হবে।

স্মোক (ধোঁয়া) ডিটেকটর নামে এক ধরনের ডিভাইস আছে। বাসাবাড়ি বা কারখানায় লাগানো হয় এটা। কোথাও আগুন লাগলে যে ধোঁয়া তৈরি হয়। স্মোক ডিডেক্টর এই ধোঁয়ার উপস্থিতি টের পেলেই সঙ্গে সঙ্গে এলার্ম বাজায়। সতর্ক করে দেয়। তোমার এই যে টেনশন/ভয় হয় এটাও অনেকটা ওই স্মোক ডিটেকটরের মতো। কিন্তু ধরো, রান্নাঘরে কেউ ডিম ভাজছে। অল্প একটু যে ধোঁয়া তৈরি হয়েছে আর তাতেই স্মোক ডিটেক্টর এলার্ম বাজানো শুরু করেছে। এমন হলে যেমন সমস্যা, তেমনি সবসময় সব ব্যাপারে তুমি ভয় পাচ্ছ, টেনশন করছ- এমন হলেও ব্যাপক সমস্যা। বুঝেছ?

- বুঝলাম, ভাইয়া। কিন্তু আমার স্মোক ডিটেকটর এত সেন্সিটিভ কেন? সবসময় সব ব্যাপারেই শুধু সতর্ক সংকেত পাঠায় কেন?

মোটাদাগে এর তিনটা কারণ রয়েছে। হয় তোমার টেনশন, ভয়ের পেছনে এই তিনটা কারণের সবগুলোই আছে এমন নয়। একটি থাকলেও তোমার টেনশন হতে পারে।

১। তোমার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে আসা জিনগত বৈশিষ্ট্য- তোমার দাদা, তার দাদা বা বংশের অন্য কারও এমন টেনশন করার অভ্যাস ছিল। তার কাছ থেকেই তুমি এই স্বভাব পেয়েছ।

২। বাবা-মার আচরণ- তোমার বাবা মা কি মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা করে? না কি সামাজিক উদ্বিগ্নতার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান, দাওয়াত, মানুষদের সাথে মেলামেশা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে?

৩। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা- আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ক্লাসে সবার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো কথা বলতে গিয়ে, প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে বা নব্য পরিচিত কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে গিয়েছি, ভুল করেছি। এমন দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের প্রায় সবারই আছে। এখনো হয়তো মাঝে মাঝে সে ঘটনাগুলো মনে হলে অসস্তি লাগে। পেটের মাঝে গুড়মুড় করে। কিন্তু সোস্যাল এংজাইটিতে ভোগা মানুষদের এই ঘটনাগুলো সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হিসেবে তাড়া করে যেন। সবসময় আতঙ্কে ভোগে। ভাবে, তারা সবার সামনে প্রেজেন্টেশন দিতে গেলে, কথা বলতে গেলে আবার আগের মতোই ভুল করবে। আবার সেই ভয়াবহ লজ্জার মধ্যে পড়তে হবে। এই ভয়ে তারা কুকড়ে থাকে। সেই কাজগুলোকে এড়িয়ে চলতে আদা জল খেয়ে নামে।

কাজ ১- তোমার বংশে কে কে এমন দুশ্চিন্তা, অপ্রয়জোনীয় লজ্জা করত, একটা নতুন ডায়েরি বা খাতাতে তার একটা লিস্ট করে ফেলো।[2]

কাজ ২- তোমার বাবা-মা উদ্বিগ্নতার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান, দাওয়াত, মানুষদের সাথে মেলামেশা এড়িয়ে চলার কয়েকটি ঘটনা তোমার সেই ডায়েরিতে বিস্তারিত লিখো।

কাজ ৩- এমন কয়েকটি ঘটনার কথা ডায়েরিতে লিখো, যা তোমাকে ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছিল এবং তুমি এখনো ভয় পাও সে ঘটনাগুলো আবার তোমার সাথে ঘটবে।

নার্ভাস হয়ে যাওয়া, লজ্জা পেয়ে একেবারে খোলসে ঢুকে পড়া এসবের কারণ যাই হোক না কেন, তোমার চিন্তার খুব একটা কারণ নেই। তুমি হয়তো অতীতে ফিরে গিয়ে সেই বিব্রতকর পরিস্থিতিগুলোতে সঠিক আচরণ করতে পারবে না, তোমার বাবা-মার আচরণেও তেমন পরিবর্তন আনতে পারবে না, বা বংশগতসূত্রে পাওয়া নার্ভাসনেস, টেনশন দূর করতে পারবে না। কিন্তু ঠিকই তুমি নিজেকে বদলাতে পারবে ইনশাআল্লাহ। তোমার ভেতরের স্মোক ডিটেক্টরটাকে হ্যাক করে মেরামত করে নিতে পারবে, যেন ডিম ভাজির ধোঁয়ায় নয়, আগুনের ধোঁয়ায় সে সতর্ক সংকেত দিতে পারে।

তিন.

সজীবের মাথা বেশ পরিষ্কার। টপিক যত কঠিনই হোক না কেন, সে খুব দ্রুত বুঝতে পারে। কোনো বিষয় একদম গভীরভাবে আত্মস্থ করে সুন্দর সুন্দর প্রশ্ন করতে পারে। কিন্তু সেও তোমার মতো অপ্রয়োজনীয় লজ্জা পায়। পেটে বোমা মারলেও মুখ দিয়ে তার কথা বের হতে চায় না।

সেদিন নুরুল হুদা স্যার পড়াচ্ছিলেন আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ। খুব দ্রুতই বুঝে ফেলল সজীব। একটা প্রশ্নও আসলো সজীবের মাথায়। বুঝানো শেষ হলে স্যারও কয়েকবার বললেন কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে নির্ভয়ে বলো। কেউ কোনো প্রশ্ন করল না। সজীবেরও বেশ কয়েকবার মনে হলো প্রশ্নটা করি। কিন্তু সে করল না। স্যার কিছুক্ষণ প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করলেন। কেউ কোনো প্রশ্ন না করায় তিনি নতুন টপিকে আলোচনা শুরু করলেন।

এখন এখানে আমরা একটু থামব। সজীবের পুরো কর্মকাণ্ড আমরা ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করব।

১। প্রথমেই চলো দেখি, সজীবের আচরণ বা অ্যাকশন- সজীব আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ দ্রুত বুঝে ফেলেছে। জ্ঞান অর্জনের প্রতি তার ব্যাপক আগ্রহ। অনুসন্ধিৎসু মন। কিন্তু তারপরেও সে নুরুল স্যারকে তার মাথায় আসা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেনি। স্যার কয়েকবার বলার পরেও চুপ করে থেকেছে। প্রশ্ন করলে সে নতুন কিছু বিষয় জানতে পারত। কিন্তু তারপরেও চুপ করে থেকেছে। কেন?

২। সজীব হয়তো উত্তর দিতে পারে- আমি আর একটু চিন্তা করলে বা ঘাঁটাঘাঁটি করলে নিজেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব, বাসায় ফিরে ভাইয়ার কাছ থেকে জেনে নেবো, অথবা ক্লাসের সময় নষ্ট না করে পরে স্যারের রুমে গিয়ে আরও ভালোমতো বুঝে নেবো। কিন্তু এগুলো কি সঠিক উত্তর? না। সঠিক উত্তর হলো- সজীব তার অপ্রয়োজনীয় লজ্জার কারণে প্রশ্ন করতে পারেনি, উঠে দাঁড়িয়ে ক্লাসের সবার সামনে প্রশ্ন করতে তার মধ্যে একটা ভয়, একটা আড়ষ্টতা, একটা নার্ভাসনেস কাজ করেছে। এই অনুভূতিগুলোর কারণে সে প্রশ্ন করেনি।

৩। এখন প্রশ্ন হলো, সজীবের এই অনুভূতিগুলো কেন আসলো? সজীব কেন শুধু নুরুল স্যারের ক্লাসে না, অন্য যেকোনো ক্লাসেই প্রশ্ন করতে ভয় পায়? ক্লাসে প্রশ্ন করার সময় আসলে সজীবের মাথায় দ্রুত যে চিন্তাগুলো ঘোরাফেরা করে-

ক) ক্লাসের সবাই আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। আমার চেহারা নিয়ে কে কী ভাববে আল্লাহই জানেন। আমার চুলের স্টাইল দেখে আমাকে হয়তো ক্ষ্যাত ভাববে, আমার চেহারা, পোশাক-আশাক নিয়ে হাসাহাসি করবে। কেউ কেউ আমাকে ভেংচিও কাটতে পারে।

খ) আমি হয়তো গুছিয়ে শুদ্ধভাবে প্রশ্ন করতে পারব না। আমার গুছিয়ে কথা বলতে না পারা, উচ্চারণ, কণ্ঠস্বর শুনে ওরা আমাকে ক্ষ্যাত, বোকা মনে করবে। আমার আর মান সম্মান থাকবে না।

গ) আমাকে ওরা আঁতেল ভাববে। ক্লাস শেষে পঁচাবে।

ঘ) স্যার আমাকে গাধা স্টুডেন্ট মনে করবেন। এত সহজ বিষয় কেন আমি বুঝতে পারলাম না। রেগে যাবেন। বকাঝকা করবেন। বা ভাববেন, আমি ক্লাসে মনোযোগ দিইনি।

সজীবের মতো মানুষেরা সবসময় মনে করে আশেপাশের সবাই তাকে জাজ (Judge) করে। তার পোশাক-আশাক, চেহারা, আচরণ, কণ্ঠস্বর ইত্যাদি নিয়ে মন্তব্য করবে, বা মনে মনে কিছু ভেবে বসে থাকবে। কে কী ভাবল বা ভাববে এই চিন্তা থেকে তাদের মধ্যে একটা ভয়, একটা বিপদের অনুভূতি তৈরি হয়। ভয় পেলে বা বিপদে পড়লে আমরা সবার প্রথমে কী করি? রাস্তার পাশে একটা সাপ দেখলে আমরা কী করি? দৌড়ে পালাই, তাই না? সেই বিপদ এড়ানোর চেষ্টা করি, তাই না? এখানে বিপদ এড়ানোর উপায় হলো- প্রশ্ন থেকে পালানো, চুপ থাকা।

সজীবও এখানে তাই করেছে। সে চুপ থেকে এই তথাকথিত বিপদ থেকে বেঁচেছে। কিন্তু সে যদি এভাবে না পালিয়ে প্রশ্ন করত, তাহলে নতুন কিছু শিখতে পারত, ক্লাসের বাকিরাও শিখত। স্যার খুশি হতেন। অনেক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেত। চুপ থাকা  এড়িয়ে যাওয়া ক্ষণিক সময়ের জন্য তৃপ্তিদায়ক হলেও দিনশেষে এটা তোমার ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করবে, তোমার সম্ভাবনাগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলবে।

তাহলে আমরা বুঝলাম সজীবের এমন প্রশ্ন না করে এড়িয়ে যাবার পেছনে ধাপে ধাপে তিনটি বিষয় কাজ করেছে।

১। নেতিবাচক চিন্তা :  প্রথমে তার মাথায় একগাদা নেতিবাচক চিন্তা এসেছে।

২। নেতিবাচক অনুভূতি : এরপর সেই চিন্তাগুলোর কারণে তার মধ্যে ভয়, আড়ষ্টতা, লজ্জা ইত্যাদি তৈরি হয়েছে।

৩। কাজ/অ্যাকশন (এড়ানো) : নেতিবাচক অনুভূতিগুলোর কারণে সে আর প্রশ্ন করেনি। প্রশ্ন করা এড়িয়ে গিয়েছে।

সোশ্যাল এংজাইটিতে ভোগা সব মানুষ এই প্যাটার্নেই কাজ করে। নেতিবাচক চিন্তা থেকে নেতিবাচক অনুভূতি, নেতিবাচক অনুভূতি থেকে কোনো কাজ করা এড়ানো- এই তিনটা বিষয় একসূত্রে গাঁথা। একটা চেইন দিয়ে বাঁধা যেন। একটার পর একটা অটোমেটিক চলে আসে। চেইন রিয়েকশন হয়। সোশ্যাল এংজাইটি দূর করার জন্য এই শেকল অবশ্যই ভাঙতে হবে।

চলো, সজীবের মতো আরও চারজন কিশোর-কিশোরীর গল্প শুনে আসি।

তাসিন

তাসিনের চিন্তা, অনুভূতি এবং অ্যাকশন চেইনটা ভালোমতো বিশ্লেষণ করা যাক।

নেতিবাচক চিন্তা- বই নিয়ে আমি তাদের আলোচনায় অংশ নিতে পারছি না, মানে আমি একটা গান্ডু, লুজার

নেতিবাচক অনুভূতি- বিব্রতবোধ করা, বন্ধুত্ব আলগা হয়ে যাবে এমন দুশ্চিন্তা করা

কাজ/অ্যাকশন- একদম নীরব হয়ে তাদের আলোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া

তাসিনের মতো তুমিও কি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ? ডায়েরীতে লেখে ফেলো সেই পরিস্থিতিতে তোমার মাথায় কী চিন্তা এসেছিল, তোমার অনুভূতি কেমন ছিল এবং তুমি কী করেছিলে। ফরম্যাটটা হবে নিচের মতো।

কাজের নাম :

নেতিবাচক চিন্তা : ----------------------------------------------

নেতিবাচক অনুভূতি : -------------------------------------------

অ্যাকশন : ----------------------------------------------------

জাফরিন

জাফরিনের বাবা বদলি হয়ে নতুন শহরে এসেছেন। জাফরিন শহরের সবচেয়ে নামকরা গার্লস স্কুলে ভর্তি হয়েছে। টিফিন পিরিয়ডে তার ক্লাসেরই কয়েকজন মেয়ে কমনরুমে বসে গল্প করছিল। নতুন স্কুলে জাফরিনের একাকী লাগছিল। তার ইচ্ছা করছিল তাদের সাথে পরিচিত হয়ে বন্ধুত্ব করতে। তাদের সাথে কয়েকবার চোখাচোখিও হলো। কিন্তু সে তাদের কাছে যাচ্ছে না। শেষমেশ কয়েকজন মেয়ে চেয়ার থেকে উঠে তার কাছে আসলো। একজন বলল, ‘কেমন আছ তুমি? স্কুলে নতুন এসেছ? চলো, আমরা পরিচিত হই। আমরা একে একে সবাই সবার নাম বলব ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেবো।’

সাথে সাথেই জাফরিনের মাথায় চিন্তা আসলো- আমার পালা আসলে আমি নার্ভাস হয়ে যাব। আমার গাল লাল হয়ে যাবে। সবাই বুঝে ফেলবে আমি খুবই নার্ভাস মানুষ।

জাফরিন আসলেই খুব নার্ভাস হয়ে পড়ল। সেই সাথে হলো লজ্জিত ও বিব্রত। এবং সে যা আশংকা করেছিল তাই হলো। তার গাল লাল হয়ে গেল। তোতলাতে তোতলাতে সে কোনোমতে বলল- ‘আচ্ছা, আমার আমার নাম…জা…জাফরিন।’

কাজ : জাফরিনের চিন্তা-অনুভূতি-একশানের চেইন রিয়েকশনটা লিখে ফেলতে পারবে না তুমি? ওপরের ফরম্যাটটার মতো করে তোমার ডায়েরীতে লিখে ফেলো।

রিয়াদ

কাজ : রিয়াদের চিন্তা-অনুভূতি-একশানের চেইন রিয়েকশনটা লিখে ফেলো তোমার ডায়েরীতে।

রাফি

হাজী শরীয়তউল্লাহ বয়েজ স্কুলের রাফি সিঙ্গারা আর নুডুলস খাচ্ছে স্কুল গেইটের সামনের বিসমিল্লাহ হোটেলে বসে। প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত সে। সকালে নাস্তা করার সময় পায়নি ইংরেজি প্রাইভেটের কারণে। গোগ্রাসে খাবারগুলো গিলতে লাগল সে। কিছুক্ষণ পরেই ফুরিয়ে গেল সিঙ্গারা আর সস। খিদে এখনো মেটেনি। আরও সিঙ্গারা আর সস লাগবে তার। ওয়েটার মামা অন্য কাস্টমারদের অর্ডার নিয়ে ব্যস্ত। ইশারা করে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হলো রাফি। একটু জোরে ডাক দিলেই ওয়েটার মামা শুনতে পেত। কিন্তু জোরে ডাক দিলে সবাই তার দিকে তাকাবে, তার কণ্ঠস্বর তাদের কাছে কেমন শোনাবে এসব ভেবে সাহস হচ্ছে না রাফির। লজ্জা পাচ্ছে। নিজের চেহারা, পোশাক-আশাক ইত্যাদির ব্যাপারে হীনমন্যতায় ভুগছে। শেষমেষ পেটে খিদে রেখেই উঠে গেল সে।

কাজ : রাফির চিন্তা-অনুভূতি-একশানের চেইন রিয়েকশনটা লেখে ফেলো তোমার ডায়েরীতে।

সজীব, রাফি, জাফরিনদের মতো সোশ্যাল এংজাইটি থেকে তুমি কোনো কাজ করা, মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়া ইত্যাদি এড়িয়ে গিয়েছ এমন কয়েকটি ঘটনা মনে করার চেষ্টা করো। এরপর চিন্তা অনুভূতি একশানের চেইন রিয়েকশন আমাদের দেওয়া ফরম্যাট অনুসারে ধাপে ধাপে লেখে ফেলো। এই কাজগুলো আশা করি খুব মনোযোগ দিয়ে করবে। কোনো সমস্যা সমাধানের আগে সেই সমস্যাটার প্রকৃতি ভালোমতো বুঝে নিতে হয়। তোমার এই বাড়ির কাজগুলো তোমাকে জানিয়ে দেবে কেন তোমার এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। কাজেই ফাঁকি দিয়ো না, ভাইয়াপুরা!

(চলবে ইনশাআল্লাহ…)

[ষোলো ৫ম সংখ্যায় প্রকাশিত]

[1] প্রথম পর্ব পড়ে নাও এখান থেকে

[2] লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। এই লেখায় লজ্জা দূর করার অর্থ এটা বোঝানো হয়নি যে, আল্লাহর হুকুম অমান্য করে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, অশ্লীলতা, অনাচারে লিপ্ত হতে হবে। বরং এমন কিছু অপ্রয়োজনীয় লজ্জা, যা আমাদের জ্ঞান অর্জন, সামাজিক মেলামেশা, ইতিবাচক, কল্যাণকর ব্যক্তিত্ব গঠন, আল্লাহর হুকুম মানতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে- তা দূর করার কথা বলা হয়েছে।