২০০০ সাল, তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি।

আমরা ফিজিক্স পড়তাম মোস্তফা স্যারের কাছে, সেখান থেকে সুন্দরবনের করমজলে পিকনিক যাবার কথা। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বগুড়া থেকে ২ টা বাসে রওনা দেওয়া হলো। এই পিকনিকে অসাধারণ আজব সব মেধার পরিচয় দিয়ে বহু মহৎ কাজ করেছিলাম। সেটা অন্য আলোচনা - আপাতত ফোকাস ঠিক রাখি।

বগুড়া লতিফপুরের ফয়েজুল্লাহ স্কুল মাঠ আমাদের পাড়াতেই। আমরা সেখানেই ফুটবলের সিজনে ফুটবল, অন্য সিজনে ক্রিকেট খেলতাম। আড্ডাও সেখানে, ইন্টারে ওঠার পর সন্ধ্যাতেও সেই মাঠেই বসতাম সবাই। মাঠে ঢুকে, কাউকে খুঁজে না পেলে - ‘এই আইয়ুব’ বলে চিৎকার দিলে যেদিক থেকে রিপিট আইয়ুব চিৎকার আসত সেদিকেই সবাইকে পাওয়া যেত। আইয়ুব ভাই, আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন।

পিকনিক থেকে এসে নামলাম ভোর ৬ টায়, শীতের দিন। শহরের মাঝখান থেকে বাসা ৩ কিলোমিটার দূরে পুলিশ লাইনে।

আমরা আমাদের লতিফপুরের ৩/৪ জন রওনা দিলাম। কুয়াশার মাঝে ইয়াকুবিয়া মোড়ে এসে হালকা দেখা গেল পাড়ার আমাদের ব্যাচের কয়েকজন আসছে - ফুল দেবে শহীদ মিনারে। মাথায় বদ বুদ্ধি এলো। আমাদের কাছে থাকা পিকনিকে না ফাটানো কিছু পটকা ছিল, নগদে সেগুলোতে আগুন লাগিয়ে ছুড়ে দেওয়া হলো সামনের দিকে। সাথে মিসফায়ার হিসেবে ইট পাটকেল ছুড়ে দেওয়া হলো আশেপশের দেয়ালে - ব্যাপক আতংক। যে যেদিকে পারে দৌড়।

মিনিট দুই পর ‘এ আইয়ুব, এ আইয়ুব’ বলে চিৎকার শুরু হলো। আমাদের গ্রুপ বুঝল আমরা কোনদিকে। সবাই একসাথে হয়ে ৮/১০ জন মিলে এলাকায় ফিরলাম। না রে, ঘটনা এখানেই শেষ না।

পরদিন সকালে কেমিস্ট্রি পড়তে গেছি, বরাবরের মতো স্যার বসতে বলে টয়লেটে ঢুকলেন। সামনে রাখা লোকাল পত্রিকা দৈনিক করতোয়া নিয়ে সামনের পাতায় এলাম। তৃতীয় হেডলাইন, প্রভাতফেরিতে অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসীদের হামলা!

আমরা ভাজা মাছ উলটে খেতে জানি না ভাব নিয়ে হইচই শুরু করলাম, এইটা ঠিক না, এসব খুবই খারাপ কাজ হইসে, এসব মেনে নেওয়া যায় না!

এ আইয়ুব!!