একটা মোরগ রোজ সকালে আযান দিত। তো, একদিন তার মালিক এসে হুমকি দিলো তাকে, ‘আর একদিন যদি আযান দিতে দেখি তোকে, তাহলে তোর সব পালক আমি তুলে ফেলবো।’
ভয় পেয়ে গেল মোরগ। মনে মনে যুক্তি দাঁড় করালো—প্রয়োজনের কারণে হারাম জিনিসও হালাল হতে পারে! আমার উচিৎ আযান দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া। নীতির সঙ্গে একটু আপস করে নিজেকে বাঁচানো। কাজেই মোরগ আযান দেওয়া বন্ধ করে দিলো।
এক সপ্তাহ পর আবার ফিরে আসলো মোরগের মালিক। আবার হুমকি দিলো সে, ‘তুই যদি মুরগীর মতো গড়গড় শব্দ না করিস, তাহলে গায়ের একটা পালকও থাকবে না।’ মোরগ নীতির সাথে আপস করল আবারও। মোরগ হয়ে মুরগীর মতো গড়গড় করতে লাগল।
এভাবে এক মাস চলে গেল। মালিক আবার আসলো। বরাবরের মতোই হুমকি, ‘এখনই যদি তুই ডিম না পারিস, তাহলে আগামীকালই তোকে জবাই দিবো।’
বেচারা মোরগ কোনো উপায় না পেয়ে কাঁদতে শুরু করল। চোখের জলে ভিজিয়ে দিলো তার পুরো দেহ। কাঁদতে কাঁদতে মোরগ বলল, ‘ইশ! যদি প্রথমবার আপস না করতাম! আযান দিতে দিতেই যদি আমার মৃত্যু ঘটত!’[1]
নীতির সাথে একবার একটু আপস করলে এরকমভাবে একটার পর একটা আপস করে যেতে হয়। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, কখনোই নীতির সঙ্গে আপস করবে না। প্রথমবার তুমি স্বেচ্ছায় আপস করবে। কিন্তু নিশ্চিত থাকো, এর পরেরবার থেকে তুমি আপস করবে কারণ তোমাকে আপস করতে বাধ্য করা হবে।
বলা হয়ে থাকে, যদি তুমি আপসের পথের পথিক হও, তাহলে নীতিতে অবিচল মানুষদের কখনো অপবাদ দেবে না। বলবেন না যে, এরা উগ্র বা এরা বোকা। তারচেয়ে বরং নিজের দিকে নজর দাও; দেখো, কী গভীর এক চোরাবালিতে ডুবে গেছ তুমি।
দুনিয়াশুদ্ধ মানুষ যদি হারাম কাজ করে, তারপরও হারাম হারাম-ই থেকে যাবে। অন্য সবাই হারাম কাজ করছে, সবাই প্রেম করে, সবাই ছেলেমেয়ে মিলে বান্দরবান-কক্সবাজার ট্যুরে যায়, সবাই অশালীন পোশাক পরে, সবাই পরীক্ষার খাতায় দেখাদেখি করে লিখে, সবাই ঘুষ খায়, সবাই বাবা-মার সাথে, সমাজের সাথে, জাতির সাথে বেঈমানি করে, আমিও একটু করি, এরকম ভাববে না। তোমার কাজের জবাবদিহিতা তোমাকেই করতে হবে। নিজের খেয়ালখুশিমতো কোনো পথে নয়; বরং সেই পথেই অবিচল থাকো, যেই পথে আল্লাহ তোমাকে অবিচল থাকার আদেশ দিয়েছেন।
আফ্রিকার একটা প্রবাদ আছে—সিংহ ক্ষুধার্ত হলেও কখনোই ঘাস খায় না। তোমার পেটে খাবার নেই—এ কারণে নীতির সাথে আপস করবে না। কখনোই না।
আর একটা কথা, হালাল-হারামের যে অনুভূতি তোমার মনে আছে, খুব সাবধান! খুব সাবধান! যদি কখনো মৃত্যু ঘটে তার, তাহলে মোরগ হিসেবেই মরে যাও। বেঁচে থাকলে মুরগীর মতো ডিম পাড়তে হবে তোমাকে।
[1] বিদেশী কাহিনি থেকে অনূদিত।
[ষোলো সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশিত]