এবার আসি খ নম্বর পয়েন্টে।[1] এই আর কিছুদিন পরেই ইমাম মাহদী আসবেন। দাজ্জাল আসবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে। কাজেই এত পড়াশোনা করে কী হবে? এগুলো তো কোনো কাজেই আসবে না—তোমাদের অনেকেরই মনে এমন সংশয় কাজ করে।

এই পয়েন্ট ব্যাখ্যা করার জন্য আবারও ফিরে যাই সাহাবিদের কাছে। মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর সাহাবিদের কিয়ামত, দাজ্জাল ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক অনেক সতর্ক করতেন। অন্যান্য ব্যাপারে সাধারণত তাঁর বক্তব্যগুলো খুব দীর্ঘ হতো না। কিন্তু দাজ্জালের ব্যাপারে তিনি দীর্ঘ বক্তব্য দিতেন। এমনকি একবার ফজরের পর বক্তব্য শুরু করে মাগরিব পর্যন্ত বক্তব্য দিয়েছিলেন। মাঝে শুধু সালাতের বিরতি ছিল। সাহাবিরা বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ এমনভাবে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করতে থাকলেন যে, আমাদের মনে হলো মদীনার খেজুর বাগানগুলোতে মনে হয় দাজ্জাল এসে লুকিয়ে আছে।’[2]

হাদীসের এই অংশে এসে আমরা একটু বিরতি নেবো। একটু গভীরভাবে দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে, সাহাবিরা ভাবতেন, এই বুঝি দাজ্জাল চলে আসলো, এই বুঝি কিয়ামত হয়ে গেল। তাঁরা একটা আতঙ্কের মাঝে থাকতেন। এখন, এই অবস্থায় থাকার পরেও তাঁরা কি জীবন যাপনের জন্য জীবিকা উপার্জনের চেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছিলেন? ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষিকাজ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন? শারীরিক উৎকর্ষতা অর্জনের চেষ্টা বাদ দিয়েছিলেন?

তাহলে আমরা কেন এমন ভাবছি? আমরা কি সাহাবিদের চাইতেও বেশি ইসলাম বুঝে ফেললাম?

কিয়ামত কখন হবে, এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে আছে। আমরা কেউই এমনকি রাসূলুল্লাহ  ﷺ পর্যন্ত এটি জানতেন না। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় হয়তো কিয়ামত সন্নিকটে। দাজ্জালের আগমনও হয়তো সন্নিকটে। কিন্তু সেটা যে আগামী বছর হবে, বা আগামী পাঁচ বছরের মাঝে হবে বা আগামী দশ বছরের মাঝে হবে, সেটা কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। ধরো, দাজ্জাল আগামী ১৫ /২০ বছর পরে আসলো। তাহলে এই ২০ বছর তুমি কীভাবে পরিবারের খরচ চালাবে? পড়াশোনা কাজে লাগবে না ভালো কথা, তাহলে অন্যকিছু করো যা কাজে লাগবে। যা থেকে তুমি পরিবারের খরচ চালাতে পারবে। কিন্তু সেটা কি করছ? না কি বাপের হোটেলে খেয়ে ‘এই দাজ্জাল আসবে’, ‘এই কিয়ামত হয়ে যাবে’, ‘সব ধ্বংস হয়ে যাবে’, ‘পড়াশোনা করে লাভ নেই’—এসব বুলি আউড়ে অলসতা করে যাচ্ছ? নিজের অলসতাকে ইসলামের লেবাস পরাচ্ছ?

দেখো, সত্যি কথা বলতে দাজ্জাল, ইমাম মাহদী , কিয়ামত এগুলো নিয়ে আমাদের অনেকেই ফ্যান্টাসিতে ভোগে। দাজ্জাল হলো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফিতনাগুলোর মধ্যে একটা, দাজ্জাল আসার পূর্বে বিশ্বের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। মহামারি হবে,  দুর্ভিক্ষ হবে, রক্তপাত হবে… অনেক মানুষ মারা যাবে। খুব কঠিন একটা সময় পার করতে হবে। সেই পরিস্থিতিতে ঈমানের ওপর টিকে থাকা অনেক কঠিন হবে। এটা একটা নির্মম, নৃশংস, কঠিন বাস্তবতা। কোনো ফ্যান্টাসির বিষয় নয়। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকা, রোমান্টিসিজমে ভোগার বিষয় নয়। এই বাস্তবতাটা বুঝতে না পারলে যদি তুমি দাজ্জালের যুগ পেয়েও যাও, হয়তো দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচতে পারবে না। (আল্লাহ হিফাযত করুন)

একাডেমিক পড়াশোনা একেবারেই যে ইসলামের কোনো কাজে লাগে না, বিষয়টি এমন নয়। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, অর্থনীতি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সাংবাদিকতা ইত্যাদি অনেক বিষয় আছে যেগুলো ইসলামের খিদমতের জন্য জরুরি। কেবল বই লিখলেই, ফেসবুকে পোস্ট দিলেই ইসলামের খিদমত হয়, আর অন্যকিছুর মাধ্যমে হয় না ব্যাপারটা তা নয়। সঠিক নিয়ত, গাইডেন্স ও পরিকল্পনার সাথে আগালে অন্যান্য বিষয়গুলো থেকেও অকল্পনীয় মাত্রায় ইসলামের খিদমত হয়।

গতানুগতিক পড়াশোনা করতে ভালো না লাগলে পড়াশোনা কোরো না। কিন্তু সময় নষ্ট না করে, অলসতা না করে, নিছক ফ্যান্টাসি আর আড্ডাবাজিতে দিন পার না করে, আয়-রোজগারের চেষ্টা করো। স্কিল অর্জন করো। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হও। পরিবারের, সমাজের বোঝা হয়ে থেকো না। ইমাম মাহদী আসলে তাঁর সাথে যোগ দেবো—এই নিয়ত রাখার পাশাপাশি তুমি দেখো তোমার জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈমানের দাবি কী। সেই দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করো। না হলে তুমি ইমাম মাহদীর যুগ পেয়ে গেলেও তোমার নাম থাকবে বিরোধী শিবিরের তালিকায়।‌

[1] প্রথম পর্ব পড়ে নাও এখান থেকে।

[2] তিরমিযি, অধ্যায় : কিতাবুল ফিতান।