রাসূলুল্লাহ ﷺ অবস্থান করছেন মক্কায়।[1] বিশাল বিজয় এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর মক্কাবাসী এসে এসে দেখা করে যাচ্ছে নবিজি ﷺ এর সাথে। এখন মহিলাদের পালা। তাঁরা দলে দলে আসছেন নবিজি ﷺ এর কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করতে। নবিজি ﷺ তাঁর সাথে দেখা করতে আসা মক্কার মহিলাদের কথা শুনছেন। নবিজির ﷺ পাশে বসে আছেন তাঁর দুইজন স্ত্রী এবং তাঁর কন্যা ফাতিমা। বানী আব্দুল মুত্তালিবের বেশ কিছু মহিলাও রয়েছে সেখানে। ইকরিমা ইবনু আবী জাহলের স্ত্রী উম্মু হাকীম এবং হিন্দ বিনতু উতবাও এসেছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে দেখা করতে। হিন্দ বিনতু উতবা হলেন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী এবং আমীর মুয়াবিয়ার মা। তিনিই মুসলমানদের ওপর বিদ্বেষবসত উহুদের যুদ্ধে নবিজি ﷺ এর প্রিয় চাচা হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কলিজা কেটে বের করে চিবিয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের এই দিনে তাই তিনি লজ্জা আর অনুশোচনায় মাথা আর মুখ ঢেকে এসেছেন।

তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি তাঁর মনোনীত দ্বীনকে বিজয় দান করেছেন। আপনার এবং আমার মধ্যে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে, সেই সূত্রে আমি আপনার কাছে ভালো ব্যবহারের আশা করি। এখন আমি একজন ঈমানদার এবং বিশ্বাসী নারী।’

এ কথা বলেই হিন্দ বিনতু উতবা তাঁর মুখের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি হিন্দ বিনতু উতবা।’

নবিজি ﷺ হিন্দকে দেখে বললেন, ‘খোশ আমদেদ।’

‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহর কসম, হেয় এবং অপমান করার জন্যে আপনার বাড়ি থেকে আমার কাছে অধিক প্রিয় বাড়ি এই পৃথিবীতে আগে আর ছিল না। আর এখন আপনার বাড়ি থেকে অধিক সম্মানিত বাড়ি আমার কাছে দ্বিতীয়টি নেই।’

রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘আরও অনেক বেশি।’

হিন্দ বিনতু উতবার কথা শেষ হওয়ার পর ইকরিমার স্ত্রী উম্মু হাকিম উঠে দাঁড়িয়ে ইসলাম গ্রহণের স্বীকৃতি দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি ইকরিমাকে হত্যা করতে পারেন, এ ভয়ে সে ইয়ামানের দিকে পালিয়ে গেছে। আপনি তাঁকে নিরাপত্তা দিন, আল্লাহ আপনাকে নিরাপত্তা দেবেন।’

নবিজি ﷺ বললেন, ‘সে নিরাপদ।’

স্বামীর জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে উম্মু হাকিম বের হয়ে গেলেন স্বামীর সন্ধানে। তাঁর সাথে নিলেন তারই এক ক্রীতদাসকে।

ক্রীতদাসকে সাথে নিয়ে পথ চলতে শুরু করলেন উম্মু হাকিম। বিশাল পথ। সাথে রূমী ক্রীতদাস। লোকটার ভাবভঙ্গি মোটেও ভালো মনে হচ্ছে না। উম্মু হাকিমের দিকে সে যে খারাপ নজরে তাকাচ্ছে সেটা এখন স্পষ্ট। উম্মু হাকিম বিভিন্ন টালবাহানা করে নিজেকে ঐ দাসের হাত থেকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করলেন। বেশ কিছু পথ পাড়ি দেওয়ার পর তাঁরা একটি আরব গোত্রের কাছে পৌঁছলেন। উম্মু হাকিম সেই গোত্রের কাছে সাহায্য কামনা করলেন এবং গোত্রের লোকজন তাঁকে সাহায্য করল। তাঁরা ঐ ক্রীতদাসকে আটকে রাখল। উম্মু হাকিম এবার একাই বের হয়ে গেলেন তাঁর স্বামী ইকরিমা ইবনু আবী জাহলের খোঁজে। সমুদ্রের উপকূলে তিহামা নামক স্থানে উম্মু হাকিম পেয়ে গেলেন তাঁর স্বামী ইকরিমাকে।

তিনি ইকরিমার কাছে গিয়ে বললেন, ‘হে আমার চাচাতো ভাই, আমি সর্বোত্তম, সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছি। আমি তাঁর কাছে তোমার জন্যে নিরাপত্তা কামনা করেছি। তিনি তোমার নিরাপত্তা মঞ্জুর করেছেন। সুতরাং এরপরও তুমি নিজেকে ধ্বংস কোরো না।’

এ কথা শুনে ইকরিমা জিজ্ঞেস করেলেন, ‘তুমি কি নিজেই তাঁর সাথে কথা বলেছ?’

‘হ্যাঁ। আমি নিজেই তাঁর সাথে কথা বলেছি এবং তিনি তোমাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।

ইকরিমা একটু সময় নিলেন। যখন আশ্বস্ত হলেন, তখন উম্মু হাকিমের সাথে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।

উম্মু হাকিম পথিমধ্যে ক্রিতদাসটির কুমতলবের কথা সব জানিয়ে দিলেন ইকরিমাকে। ইকরিমা তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি ক্রীতদাসটির এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্যে ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন এবং ক্রীতদাসটিকে হত্যা করলেন। এরপর দুজনে মিলে উঠলেন এক বাড়িতে। ইকরিমা তাঁর স্ত্রিকে কাছে পেয়েছেন। তিনি উম্মু হাকিমের কাছে আসলেন। উম্মু হাকিম বাঁধা দিলেন। তিনি ইকরিমাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘আমি একজন মুসলিম নারী আর আপনি এখনো একজন মুশরিক।’

উম্মুহাকিমের কাছ থেকে এরকম কিছু ইকরিমা আশা করেননি একদমই। উম্মু হাকিম তাঁকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করবে এটা হয়তো তাঁর ধারণাতেও ছিল না। তিনি বেশ অবাক হলেন। তিনি উম্মু হাকিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমার আর আমার মাঝখানে যেই ব্যপারটি অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা তো খুব বিরাট ব্যাপার।’

পরদিন সকালে তাঁরা মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এদিকে মক্কায় রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবিদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শীঘ্রই ইকরিমা কুফর ছেড়ে দিয়ে মুমিন হিসেবে তোমাদের কাছে আসছে। তোমরা তাঁর বাবাকে গালি দেবে না। কারণ, মৃতকে গালি দিলে তা জীবিতদের মনে কষ্টের কারণ হয়। অথচ মৃতের কাছে তা পৌঁছায় না।’

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কথা খুব দ্রুতই ফলে গেল। উম্মু হাকিমকে নিয়ে ইকরিমা প্রবেশ করলেন মক্কায়। চলে এলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বসে ছিলেন। ইকরিমাকে দেখেই আনন্দে উঠে দাঁড়ালেন। চাদরটাও গায়ে জড়ালেন না। এগিয়ে গেলেন ইকরিমার দিকে। তাঁর সামনে গিয়ে বসলেন। ইকরিমা দাঁড়িয়ে আছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে। তিনি নবিজি ﷺ কে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ, উম্মু হাকিম আমাকে বলেছে আপনি আমাকে আমান দিয়েছেন।’

‘সে সত্যি বলেছে। তুমি নিরাপদ।’ জবাব দিলেন নবিজি ﷺ।

‘আপনি কীসের দাওয়াত দিয়ে থাকেন?’

‘আমি তোমাকে দাওয়াত দিচ্ছি তুমি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তুমি সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে।’

রাসূলুল্লাহ ﷺ ইকরিমাকে ইসলামের সবগুলো আরকাম বর্ননা করলেন।

ইকরিমা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আপনি একমাত্র সত্যের দিকেই দাওয়াত দিচ্ছেন এবং কল্যাণের আদেশ দিচ্ছেন। এই দাওয়াত দেওয়ার আগেও আপনি ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সত্যবাদী এবং সবচেয়ে সৎকর্মশীল।’

এই কথা বলেই ইকরিমা তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন নবিজি ﷺ এর দিকে। তারপর বললেন, ‘আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্নাকা আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।’

এরপর তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দিন যা আমি বলতে পারি।’

নবিজি ﷺ বললেন, ‘তুমি বলো, আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।’

তুমি বলো, ‘উশাহিদুল্লাহা ওয়া উশহিদু মান হাঁদারা আন্নি মুসলিমুন মুজাহিদুন মুহাজিরুন।’

‘আল্লাহ ও উপস্থিত সবাইকে সাক্ষী রেখে আমি বলছি। আমি একজন মুসলিম, মুজাহিদ ও মুহাজির।’

নবিজি যা বলতে বললেন, ইকরিমা সেটাই বললেন। এবার নবিজি ইকরিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘অন্য কাউকে আমি দিচ্ছি এমন কিছু যদি আজকে তুমি আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে দেবো।’

ইকরিমা খুব ভালো একটা সুযোগ পেয়ে গেলেন। এখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে যা ইচ্ছা চেয়ে নেওয়া যাবে।

ইকরিমা বললেন, ‘আমি আপনার কাছে চাচ্ছি, যত শত্রুতা আমি আপনার সাথে করেছি, যত যুদ্ধে আমি আপনার মুখোমুখি হয়েছি, আপনার সামনে কিংবা পেছনে, যত কথাই আমি আপনার বিরুদ্ধে বলেছি—এই সবকিছুর জন্যে আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন।’

রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কথা শুনে দুআ করলেন, ‘হে আল্লাহ, যত শত্রুতাই সে আমার সাথে করেছে, তোমার নূরকে নিভিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হয়ে যত পথ সে ভ্রমণ করেছে, এই সবকিছুই আপনি ক্ষমা করে দিন। তাঁকে ক্ষমা করে দিন। আমার সামনে এবং আমার অগোচরে যতই মানহানিকর কথাই সে আমার ব্যপারে বলেছে, সেটাও আপনি ক্ষমা করে দিন।’

নবিজীকে এভাবে দুআ করতে শুনে ইকরিমার দারুণ আনন্দ হচ্ছে। নবিজি ﷺ তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তিনি আল্লাহর কাছে ইকরিমাকে ক্ষমা করার জন্যে দুআও করেছেন, এর থেকে বড় পাওয়া এই মূহুর্তে ইকরিমার জন্যে আর কী হতে পারে। ইকরিমা বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্যে যত কিছু আমি ব্যয় করেছি তাঁর দ্বিগুণ আমি এখন ব্যয় করব আল্লাহর রাস্তায়। আর আল্লাহর রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্যে যত যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করেছি, তাঁর থেকে দ্বিগুণ যুদ্ধ আমি আল্লাহর রাস্তায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে করব।’

এই দিন ইকরিমা সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করেছিল ইসলামে। ইসলামে প্রবেশ করার পর তিনি যুদ্ধের ময়দানে যেমন সাহসের সাথে ঘোড়া দৌড়েছেন, ঠিক তেমনি আল্লাহর ইবাদাতেও নিজেকে দিয়েছেন বিলীন করে। তিনি কুরআনকে মুখের ওপর রেখে বলতেন, ‘কিতাবু রাব্বি কালামু রাব্বি - আমার রবের কিতাব আমার রবের কালাম।’

কথাটা বলতেই তাঁর চোখ ভিজে আসত। ইকরিমা কাঁদতেন, তাঁর রবের ভালোবাসায় কাঁদতেন।

৩.

ইয়ারমুকের যুদ্ধ চলছে। প্রায় এক থেকে তিন লক্ষ রোমান বাহিনী চব্বিশ থেকে চল্লিশ হাজার মুসলিম বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বেশ কিছুদিন থেকে মুখোমুখি দুই বাহিনী।

ইকরিমা ইবনু আবী জাহল রাদিয়াল্লাহু আনহু রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন সাহসিকতার সাথে। এর মধ্যে সময় গত হয়েছে অনেক। নবিজি ﷺ চলে গেছেন। চলে গেছেন খলীফাতু রাসূলিল্লাহ আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু। এখন সময় আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর।

উমারের আমলে ইয়ারমুকের এই যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতে চায় মুসলিমরা। তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিশাল কাফির বাহিনীর ওপর। চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ। হঠাৎ মুসলিম বাহিনীর ওপর দারুণ চাপ সৃষ্টি করেছে কাফিররা। ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন। তরবারি কোষমুক্ত করে তিনি রোমান বাহিনীর অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছেন। খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ছুটে এলেন ইকরিমার দিকে। তিনি ইকরিমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘ইকরিমা, এরকম কোরো না। তোমার মৃত্যু মুসলিমদের জন্যে বিপজ্জনক হবে।’

ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘খালিদ, আমাকে ছেড়ে দাও। রাসূল ﷺ এর ওপর ঈমান আনার ব্যপারে তুমি আমার থেকে অগ্রগামী। আমার বাবা আর আমি ছিলাম আমাদের প্রিয় নবিজির ﷺ সবচেয়ে বড় শত্রু। আমাকে আমার অতীতের কাফফারা আদায় করতে দাও। অনেক যুদ্ধেই আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিরুদ্ধে লড়েছি। আর আজ আমি রোমান বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে যাব? এ আমার পক্ষে সম্ভব না।’

এ কথা শেষ করেই ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিম বাহিনীর উদ্দেশ্যে হুংকার দিলেন, ‘আজ মৃত্যুর ওপর বাইয়াত করতে চায় কে?’

তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দিলেন তাঁর চাচা হারিস ইবনু হিসাম, দিরার ইবনুল আযওয়ারসহ আরও চার শ মুসলিম সৈনিক। তাঁরা খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর তাঁবুর সামনে থেকেই তুমুল যুদ্ধ শুরু করলেন। ইকরিমা ইবনু আবী জাহল বীরের মতো যুদ্ধ করলেন রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে। শত্রুদের ভেতর ঢুকে গিয়ে শত্রুদের ভীত নাড়িয়ে দিলেন। তাঁর সাথে মুসলিমদের চার শ সৈনিকও বীরের মতো যুদ্ধ করে ইয়ারমুকের ময়দানে ছিনিয়ে আনলেন বিরাট বিজয় এবং সম্মান।

সময় গড়াল। যুদ্ধ প্রায় শেষ। বিশাল বিজয় ছিনিয়ে এনেছে মুসলিম বাহিনী। ইয়ারমুকের ময়দানে শাহাদাতবরণ করা শত শত মুসলিম সেনাদের সাথে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে হারিস ইবনু হিসাম, আইয়াশ ইবনু আবী রবিআ এবং বীর যোদ্ধা ইকরিমা ইবনু আবী জাহল রাদিয়াল্লাহু আনহুম। হারিস ইবনু হিসামের অসম্ভব তৃষ্ণা পেয়েছে। তিনি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পানি চাইলেন। কেউ একজন তাঁর জন্যে পানি নিয়ে এলো। তিনি পানি মুখে দেওয়ার আগে দেখলেন ইকরিমা তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকে। পানি আর মুখে নিলেন না হারিস ইবনু হিসাম। তিনি বললেন, ‘ইকরিমাকে দাও।’

পানির পাত্রটি নিয়ে যাওয়া হলো ইকরিমার কাছে। ইকরিমা দেখলেন আইয়াশ তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকে। ইকরিমা বললেন, ‘আইয়াশকে দাও।’

আইয়াশের কাছে পানির পাত্রটি নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু ততক্ষণে তিনি রবের ডাকে সাড়া দিয়ে দিয়েছেন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তারপর পানি নিয়ে আবার যখন ইকরিমা আর হারিসের কাছে ফেরা হলো, দেখা গেল তাঁরা দুজনও আল্লাহর রাস্তায় তাঁদের জীবন কুরবান করেছেন। বীর যোদ্ধা ইকরিমা এবং হারিস মৃত্যুবরণ করেছেন।

ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুর ওপর বাইয়াত নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। সাহসিকতার সাথে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আজ আমাদের এই মুসলিম উম্মাহর ইকরিমা ইবনু আবী জাহলের মতো বীরদের খুব বেশি প্রয়োজন। আল্লাহ এই উম্মাহর নেতৃত্ব আবারও তাঁদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের মানুষগুলোর মতো মানুষের হাতে প্রদান করুন। আমীন।


[1] প্রথম পর্ব পড়ে নাও এখান থেকে