নাটক-সিনেমা হচ্ছে স্লো-পয়জনিং এর মতো। এটা তোমার নৈতিক মূল্যবোধকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। রাতারাতি করে না। তা করলে তো তুমি ধরেই ফেলতে। বুঝেই ফেলতে যে, সিনেমা তোমাকে খারাপ কিছু শেখাচ্ছে।

একটা গল্প বলি তোমায় শোনো। ছোটবেলা থেকেই আমি আব্বা-আম্মার খুব অনুগত ছিলাম। তাদের কথার বরখেলাপ করতাম না কখনো। তারপর একদিন বাসায় টিভি আসলো। টিভি আসা মানেই নাটক আর সিনেমার দুয়ার খুলে দেওয়া। হলোও তাই।

আমরা একদম নির্দোষ ইচ্ছে নিয়েই সিনেমা দেখতাম। স্রেফ বিনোদনের উদ্দেশ্যে। অবসরে। কাজের সময় কাজ। বিকেলে মনটা একটু ‘চাঙা’ করার জন্য সিনেমা দেখতে বসতাম।

সামাজিক সিনেমার খুব জয়জয়কার ছিল তখন। সমাজের নানা অসংগতির চিত্র তুলে ধরা হতো সিনেমার মাধ্যমে। এসব সামাজিক সিনেমাগুলো যে কতটা সামাজিক তা পরে বুঝেছি। সিনেমার মাধ্যমে সমাজের অসংগতি তুলে ধরে নাকি সিনেমাই সমাজে অসংগতি সৃষ্টি করে সেটাও বুঝেছি।

যা বলছিলাম। পারিবারিক দীক্ষা থেকেই মেয়েদের সাথে প্রেম করার ব্যাপারটা আমি খারাপ দৃষ্টিতেই দেখতাম। কিন্তু যখন থেকে সিনেমায় আসক্ত হলাম তখন থেকে ব্যাপারটা বদলে যেতে লাগলো। পর্দায় নায়ক-নায়িকার রসায়ন দেখে আমারও মনে হতে লাগলো, ‘ইশ! আমারও যদি একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতো! সে হত নায়িকা আর আমি নায়ক।’

উদ্ভট ভাবনাগুলো ভাবনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেনি। যেই আমি প্রেম নামক ফ্যান্টাসিকে খারাপ চোখে দেখতাম সেই আমিই কিনা! সিনেমার কলাকুশলীরা সফল বটে!

অধঃপতনের গল্প এই একটাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু না। সিনেমা দেখে আরও একটা ‘মহান’ গুণ অর্জন করেছিলাম আমি। বাবা-মায়ের সাথে তর্ক করা। তাদের সাথে বেয়াদবি করা। কারণ আমার নায়ক এমনটা করতো। নায়ককে যদি অনুকরণই না করি তাহলে কিসের ভক্ত হলাম আমি!

অবসরে একটুখানি বিনোদন আর মন চাঙা করার জন্য যেই সিনেমা দেখা শুরু হয়েছিল তা আমাকে কতদূর নিয়ে গেল। আসলে এমনটাই হয়।

তুমি নিজেকে আমার জায়গায় বসাও। এখন বলো, তোমারও কি এমন হচ্ছে না? তুমিও কি ইদানীং আব্বু-আম্মুর সাথে তর্ক করছো না? কিন্তু কেন করছো? একটু গভীরভাবে ভাবো। দেখবে, কোনো কারণ ছাড়াই রেগে যাচ্ছো। মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে সবসময়। কারণ ওটাই। সিনেমায় তো তুমি এসবই দেখছো। অবচেতন মনে সেটাই অনুকরণ করছো।

মেয়েদের সাথে ফষ্টিনষ্টির ব্যাপারটা আর আলাদা করে বলার দরকার মনে করছি না। এসব সিনেমা টিনেমা দেখে একটা গার্লফ্রেন্ড না যোগাড় করতে পারলে নিজেকে ছেলেই মনে হয় না। তাই না? বন্ধুরা টিটকারি দেয়। আজকালকার বন্ধুরা আবার কয়েক কাঠি বেশি সরেস। শুধু গার্লফ্রেন্ড থাকলেই হয় না। ফিজিক্যাল কিছু না হলে পুরুষত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

একসময়ের নিপাট ভদ্র ছেলেটাও এভাবে হারিয়ে যায় সংস্কৃতি নামের অপসংস্কৃতিতে। বাবা-মায়ের আদরের ছেলেটা হয়ে যায় কিশোর গ্যাং এর সদস্য। এ সবকিছুই বিনোদনের মোড়কে নাটক-সিনেমার উপহার। সমাজ থেকে নৈতিক মূল্যবোধ মিটিয়ে দিতে কোমর বেঁধে নেমেছে তারা।

ভাই আমার, তুমি নিশ্চয়ই তাদের দাবার গুটি হতে চাও না। তুমি তো ভালো ছেলে। তাই তো তোমাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই এত্তগুলা কথা বললাম। তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখি আমি। তুমি একদিন অনেক বড় হবে। ঘুণে ধরা এই সমাজকে বদলে দেবে। যারা এই সমাজকে অশ্লীলতা আর নষ্টামির আখড়া বানাতে চায় তাদের কালো হাত ভেঙ্গে দেবে।

তাহলে আজ এখনই আমাকে কথা দাও। আর কখনো সিনেমা দেখবে না। যত খারাপ কাজ আছে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবে। ভালো করে পড়াশোনা করবে। সুন্দর স্বপ্নগুলো যে পূরণ করতে হবে।

কথা দিচ্ছ তো?