গ্রামের মাতুব্বর, মুরব্বি ও ইমাম সাহেবকে নিয়ে আফজাল চাচা তার ছোট ছেলে হাবলু সম্পর্কে বৈঠকে বসেছেন।
চাচা : আরে বেডা, তোর মাথায় এগলা কে ঢুকাইছে বল তো; তারে আমি পাইলে কচুকাটা কইরা মাছ ভাজা কইরা খামু।
হাবলু : দেখেন না মাতুব্বর সাহেব, আমার আব্বারে এই কথাডা আজ এক দশ চার মানে চৌদ্দ দিন ধইরা বুঝাইতেছি, তাও আব্বার মাথাত এই কথাডা ঢুকতেছে না।
চাচা : আরে চুপ থাক, আহাম্মক। তোর ওসব পাগলামো কথাবার্তা তোর কাছেই রাখ।
হাবলু : তুমিই একটা আহাম্মক। তোমার বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠী আহাম্মক।
চাচা : বাহ, তাইলে তুই আহাম্মকের ঘরে জন্ম লইয়া বড় বুদ্ধিজীবী হইয়া গেছস না!
মাতুব্বর : আফজাল চাচা, শান্ত হোন। আপনেরা তো এখনো আসল কথাডাই জানালেন না।
হাবলু : আসল কথা হইলো গিয়া যে, মোর ভেতর একটা অশরীরী সত্তা বাস করে; যেডা মুই অনুভব করি।
মুরুব্বি : তোমার অশরীরী সত্তাডা কেমন, শুনি? আজকাল তোমার মধ্যে আবার কোনো ভূত-প্রেত বাসা বাঁধল না তো!
চাচা : মোর তো তাই মনে হইতেছে। পোলাডারে আজই হুজুরের পানিপড়া খাওয়ান লাগব।
হাবলু : আরে না না; মোর ভেতর ভূত-প্রেত আইতে যাইব ক্যান?
মুরব্বি : তাইলে কী?
হাবলু : আসল কথা হইল গিয়া, এই যে মোরে দেখতেছেন আস্ত একটা পোলা, মোর বাইরে পুরুষত্ব থাকলেও ভেতরডা নারীত্ত্বে বিশ্বাসী।
মাতুব্বর : মানে?
হাবলু : মানে মুই পোলা হইলেও ভেতরডা মাইয়া মাইয়া লাগে।
মুরব্বি : সোজাসাপটা কও তো, তুমি কি হিজড়া?
হাবলু : না, না, হিজড়া হইতে যাইব ক্যান?
মাতুব্বর : তাইলে?
হাবলু : মুই নিজেরে সবসমই মাইয়া মাইয়া অনুভব করি। অর্থাৎ, মোর মনডা মাইয়ার; কিন্তু দেহডা পোলার।
মাতুব্বর : সর্বনাশ করেছে রে, এখন তাইলে কী হইব?
হাবলু : মোর মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা মোর মনডারে ভুল শরীলে স্থান দিয়াছেন।
মুরব্বি : তাইলে তোমার মনডারে সঠিক স্থানে বসানা যাইব কেমনে?
হাবলু : হের উপায় একডাই, আমি মাইয়াগো লাহান সাজগোজ করুম। পোশাক আশাক পড়ুম। আপনেরা মাইয়া বইলা মাইনা লইবেন। তবেই মোর জনম সার্থক হইব।
ইমাম : ঠিক আছে, কিন্তু তোমার বাপের জমি ভাগের সময় তুমি কিন্তু মাইয়ার ভাগে ভাগ পাইবা।
হাবলু : বুঝতে পারলাম না।
ইমাম : মানে, তুমি আর তোমার বোন জমি পাইবা চার ভাগের এক ভাগ কইরা। আর তোমার বড় ভাই একাই দুই ভাগের এক ভাগ পাইব।
হাবলু : নাআআআ... এইডা হইতে পারে না। মুই জমির চার ভাগের একভাগ নিমু না। মুই মাইয়া হইব না।
মুরব্বি : তাইলে তোমার অশরীরী মাইয়া সত্তাডা যে কান্নাকাটি করব।
হাবলু : ঐ মাইয়া সত্তা বইলা কিচ্ছু নাই। ওগলা মিথ্যা কথা। মোর আসলে মাইয়া সাইজা মাইয়াদের লগে খারাপভাবে মেলামেশা করবার ইচ্ছা জাগছিল। তাই এইগুলান কাহিনি করছিলাম। অ কী! মুই কইয়া দিলাম ক্যা!
সত্য কথা মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে বুঝতে পেরে হাবলু মুখ চেপে ধরে পড়িমড়ি করে বাড়ির দিকে দৌড় দিল!
[ষোলো ষষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত]