পরীক্ষা শব্দটা শুনলেই একটা ছড়ার কয়েক লাইন মনে পড়ে যায়। ছোটবেলায় কিশোরদের উপযোগী একটা ম্যাগাজিনে পড়েছিলাম। যদিও লেখকের নাম মনে নেই আজ আর।

“জানিস না তো ছি

কালকে আমার কী?

কালকে আমার পরীক্ষা

জীবন-মরণ তিতিক্ষা।

তাই তো আমি পড়তে বসেছি।”

সত্যিই আমরা অনেকেই আছি সারা বছর চেয়ার-টেবিলের কাছে না গেলেও। যেই পরীক্ষা আসে অমনি অতি মনোযোগী হয়ে উঠি।

আবার পরীক্ষার ধরনের কথা যদি বলে, তবে সেই শিশুশ্রেণি থেকে আজ অবধি কত যে পরীক্ষা দিয়ে এলাম তার কোনো ইয়াত্তা নেই। তবে আমার মনে হয়, এখনকার বাচ্চাদের পরীক্ষার ধরন ও সংখ্যা অনেক বেশি। আজ ক্লাস টেস্ট তো কাল সারপ্রাইজ টেস্ট, পরশু হয়তো মান্থলি টেস্ট। আরও আছে সেমিস্টার এক্সাম, ফাইনাল এক্সাম, বোর্ড এক্সাম। নাম না জানা আরও কত যে এক্সাম যে দেয় ছাত্র-ছাত্রীরা! পরীক্ষা দিতে দিতে অস্থির হয়ে যায়। পড়ালেখাটা একটা ভয়ের বিষয়ে পরিণত হয় অনেকের কাছে। কারণ, ভালো রেসাল্ট শুধু নয়, সবার চেয়ে ভালো করার অতিরিক্ত একটা প্রেশার থাকে সবসময়। ফলে শৈশব-কৈশোরের দুরন্তপনা পিষ্ট হয় পরীক্ষার যাঁতাকলের নিচে। আসলে কোনো কিছুই অতিরিক্তি যেমন ভালো না, তেমন কমও ভালো না।

সে যাহোক, এবার মূলকথায় ফিরে আসি। আমার মায়ের ছোটবেলার গল্প বলি তোমাদের। একেবারে প্রথম শ্রেণিতে পড়েন তখন তিনি। সুন্দর হাতের লেখায় সারা খাতা ভরে লিখে খাতাটা সুন্দর মতো ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। ফলস্বরূপ ঐ পরীক্ষায় গ্রেস দিতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। কী আর করা! সে তো প্রতিদিনই খাতা বাসায় নিয়ে যেত। আজ যে দিয়ে যেতে হবে তা কে জানত!

তোমরা কিন্তু ভুলেও এ কাজটি কোরো না। আম্মা হাসতেন আর পরীক্ষা এলেই তার জীবনের গল্পটা আমাদের মনে করিয়ে দিতেন।

আর আব্বা সবসময় বলতেন, পরীক্ষার হলে বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে যেন সীটের চারদিকে চেক করে বসি। বলা তো আর যায় না, যদি কেউ দুষ্টুমি করে নকলের টুকরা কাগজ ফেলে রাখে। আর নকল করে দেখে লেখা আমরা অবশ্য কল্পনাই করতে পারতাম না। আব্বা জানতে পারলে বাড়িছাড়া করবেন বলে হুমকি দিতেন।

তবে একটু আধটু শুনে লিখেছি ছোটবেলায়। একটা সময় পর ওটাও আর করতাম না। মনে হতো সবই হারাম হয়ে যাবে।

এবার বলি পরীক্ষার আগের রাতের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম পরীক্ষার আগের রাতে এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কেটেছে প্রতিটি মুর্হূত। সারারাত জেগে পড়েছিলাম। অবশ্য পরীক্ষার হলে যে ঝিমুনি আসেনি অস্বীকার করব না। তাই বন্ধুরা সাবধান! ভুলেও এ কাজ করতে যেয়ো না। আগের রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম খুবই প্রয়োজন। তবে এজন্য তোমাকে অবশ্যই সারা বছর খাঁটা-খাটুনি করে পড়ালেখাটা এগিয়ে নিতে হবে। আমি অবশ্য একটা ট্রিক ফলো করতাম। চুপি চুপি তোমোদেরও বলি। কান লাগিয়ে শোনো। শিক্ষকদের লেকচারগুলো খুবই মনোযোগের সাথে শুনতাম। নোট নিতাম। প্রতিদিনই কিছু পড়া এগিয়ে রাখতাম। মূল বইগুলো আগেই রিডিং পড়ে রাখতাম। ফলে ক্লাসে আর নতুন মনে হতো না। সহজ লাগত। যেখানে বুঝতাম না ওটাও মার্ক করে রাখার ফলে শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারতাম। তাই পরীক্ষার আগের রাতে প্রেশার কম থাকত।

আর নিজে নিজেই আগের সালের প্রশ্ন দেখে বা মডেল টেস্ট ধরে ধরে সময় ভাগ করে পরীক্ষা দিতাম। ফলে কখনোই পরীক্ষার হলে সময়ের টানাটানি হতো না। মজার ব্যাপার কী, এভাবে লেখার ফলে অনেক দ্রুত লেখার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। ফলে পরীক্ষার সময় ১০/১৫ মিনিট আগেই লেখা শেষ হয়ে যেত। এরপর বেশ কয়েকবার খাতা রিভিশন করার সুযোগ পাওয়া যেত, যা বানান ভুল শুধরে নিতে অনেক বেশি সাহায্য করত।

অনেক সময় দেখা যেত, এমন সময়ে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে যখন পরীক্ষা শেষ হবে তখন আর সালাতের ওয়াক্ত থাকবে না। তো তখন কী করব? সালাত কাযা করবে? অবশ্যই না। যিনি গার্ডে থাকবেন তার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ফরযটুকু হলেও আদায় করে নেওয়া। কতজন তো ওয়াশরুমেও ছুটে। তবে বেশিরভাগেরই ধান্দা থাকে টুকরা কাগজে চোখ বুলানোর। বা নিকাবও করতে দিচ্ছে না। নিকাব খুলে ফেলব? কখনোই না। মহিলা শিক্ষকের কাছে যাচাই করতে অনুরোধ করা। তুমি যদি দৃঢ় থাকো, আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবেন।

তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো আল্লাহর সাহায্য। পরীক্ষার হলে যাওয়ার পূর্বে দুই রাকাআত সালাত পড়ে সাহায্য চেয়ে নিতে ভুলো না। আর দুআ তো ভাগ্য বদলাতে সাহায্য করে। তাই না!

প্রিয় বন্ধুরা! দুনিয়ার জীবন তো মুমিনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। পরীক্ষা তো থাকবেই। তাই শুধু পড়ালেখা নয়। সবকিছুতেই হতে হবে আমাদের অনন্য। তবেই না জান্নাতি উদ্যানে ঘুরতে পারব ইচ্ছামতো। তাই আজ থেকে সময়ের কাজ সময়ে করে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য নিজেকে আরও বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলব। এ প্রত্যয়ে হোক আমাদের নতুন দিনের শুভ সূচনা।