হ্যাঁ, ভাইয়া ও আপু! শিরোনাম ঠিকই পড়েছ। টয়লেটের চাইতেও ১০ গুণ নোংরা বস্তু তুমি পকেটে নিয়ে ঘুরো। বিছানায়, খাবার টেবিলে, পড়ার টেবিলে, টয়লেটে, ক্লাসরুমে, খেলার মাঠে, মাসজিদে—দুনিয়ার এমন কোনো স্থান নেই যেখানে তুমি সেটা নিয়ে যাও না। দিনের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই তুমি তাকে নিয়ে থাকো। তার সাথে তোমার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। তাকে না দেখলে তুমি থাকতে পারো না। সেটা কী জিনিস, বলো তো! ধরে ফেলেছ, তাই না?

সেটা হলো মোবাইল ফোন। তোমার জীবনের অপরিহার্য মোবাইল ফোন এতটাই নোংরা। এটা আমার কথা না। আমেরিকার অ্যারিযোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের কথা। ইউনিভার্সিটি অফ টারটুর আরেকদল গবেষক জানাচ্ছেন, হাই-স্কুলের শিক্ষার্থীদের ফোনে প্রায় ১৭ হাজার ব্যাকটেরিয়ার জিন প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বেড়েছে।

আসলে এই যে আমরা টয়লেট থেকে শুরু করে রান্নাঘর, লোকাল বাস, ক্লাসরুম, মাঠে-ময়দানে সব জায়গায় নিয়ে যাই, সেখান থেকে জীবাণু চলে আসে আমাদের ফোনে। ফোনের উষ্ণ আবহাওয়া জীবাণুদের জন্য পোয়াবারো হিসেবে আবির্ভূত হয়। সমানে বংশবিস্তার করে তারা। তো এরপর তারা ফোন থেকে পার হয় আমাদের আঙ্গুলে, হাতে। সেখান থেকে মুখে, নাকের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল তো বলেছেই—মোট ইনফেকশনের শতকরা ৮০ ভাগই ছড়ায় হাতের মাধ্যমে।[1]

বুঝতেই পারছ, রোগজীবাণুর এই আতুড়ঘর ফোনকে পরিষ্কার রাখতে হবে নিয়মিতই। না হলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙেচুরে দিতে পারে। যেমন ধরো, মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে থাকা E.coli ব্যাকটেরিয়া জ্বর, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি সৃষ্টি করে। MRSA হাড়, ফুসফুস, হৃদপিন্ডের ভাল্ব ইত্যাদিতে প্রাণঘাতী ইনফেকশন তৈরি করে। তা ছাড়া তোমার শরীরকে বহুল ব্যবহৃত কিছু এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। অর্থাৎ অসুখ হলে নিরাময়ের জন্য তোমার শরীরে সেই এন্টিবায়োটিক ওষুধগুলো আর কাজ করবে না। ওইদিকে স্ক্রিনে থাকা মোল্ড ফাংগাসের কারণে এলার্জিজনিত অসুখ বৃদ্ধি পাবে। যেমন- সর্দি কাশি, গলা, নাক চুলকানো, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যাথা, ক্লান্তিভাব ইত্যাদি।[2] এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে মোবাইল ফোন পরিষ্কার করতে হবে?

যা যা লাগবে[3] :

দুটো নরম মসৃণ কাপড়, ক্ষারমুক্ত সাবান, টুথপিক বা কটনবাড ও পানি। 

যেভাবে পরিষ্কার করবে :

প্রথমে জানতে হবে তোমার ফোন কতটা পানিনিরোধক। সেটা বুঝে ঠিক করো ফোন পরিষ্কারের জন্য কতটা পানি ব্যবহার করা নিরাপদ হবে। সরাসরি পানি ব্যবহার না করে সতর্ক থাকার জন্য ভেজা টাওয়েল ব্যবহার করতে পারো। 

১. ফোনের সঙ্গে কোনো কেবল লাগানো থাকলে সেটা খুলে ফোন বন্ধ করো। খেয়াল রাখবে, ফোনের ও তোমার, কারও যেন ক্ষতি না হয়।

২. হালকা ক্ষারমুক্ত সাবানের সঙ্গে পানি মিশিয়ে নিজের বিবেচনায় সাবান-পানির অনুপাত ঠিক করো।

৩. এক টুকরো নরম মসৃণ কাপড় সাবান-পানির মিশ্রণে ভিজিয়ে নাও। এরপর কাপড় থেকে অতিরিক্ত পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে নাও।

৪. পানি ঝরানো ভেজা কাপড় দিয়ে ফোনের ওপর, নিচ ও পাশের অংশ মুছো। 

৫.  ফোন যতই পানিনিরোধক হোক না কেন, সরাসরি সাবান-পানির মিশ্রণে ডুবাবে না।

৬. এবার এক টুকরো শুকনো নরম মসৃণ কাপড় দিয়ে ফোন মুছে নাও।

৭. সিমহোল্ডার থেকে সিম খুলে নাও। সেটিও চাইলে পরিষ্কার করতে পারো। তবে করতেই হবে এমন নয়। 

৮. সাবান-পানির মিশ্রণে কটনবাড ডুবিয়ে নাও। আঙুল দিয়ে চেপে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে নাও।

৯. সিমকার্ড ঢোকানোর ট্রে ও স্থানটি ভেজা কটনবাড দিয়ে সাবধানে পরিষ্কার করো। প্রয়োজনে টুথপিক দিয়ে সিমকার্ড ঢোকানোর স্থানের ময়লা বের করতে পারো।

১০. শুকনো কাপড় দিয়ে সিমকার্ড ঢোকানোর ট্রে মুছো।

১১. এরপর সব আবার জায়গা মতো সেট করে ফোন চালু করো। 

প্রতিরোধমূলক কিছু ব্যবস্থা :

এই জায়গাগুলোতে ফোন নিয়ে যাব না—

  •  টয়লেট
  •  রান্নাঘর
  •  ডাইনিং টেবিল
  •  এমন কোনো স্থান যেখানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, জীবাণু বা ক্ষতিকর পদার্থ থাকতে পারে
  •  হাসপাতাল, চিকিৎসকদের চেম্বারে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ফোন ব্যবহার করব না

মাঝে মাঝেই ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোব। বিশেষ করে-

  • রান্না করার সময়, পূর্বে এবং পরে
  • খাবার পূর্বে ও পরে
  • টয়লেট ব্যবহারের পরে
  • হাঁচি কাশি বা নাক পরিষ্কার করার পরে
  • শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের পর
  • কোনো প্রাণীকে স্পর্শ করার পর
  • ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার পর
  • ডাস্টবিন স্পর্শ করার পর 

তবে সবচেয়ে ভালো হলো, সারাদিন ফোনের স্ক্রীনে ঘাড় গুজে না থেকে, বাস্তব দুনিয়ার জীবনটা উপভোগ করো। কত কী করার আছে। কত কিছু শেখার আছে। স্মার্টফোন আসক্তি তোমার জীবন খেয়ে ফেলছে। অজগর সাপের মতো গিলে ফেলছে তোমাকে। একটু একটু করে।


[1] How Dirty Is Your Cell Phone?

[2] Signs and Symptoms of Cell Phone Addiction

[3] মোবাইল ফোন জীবাণুমুক্ত করবেন যেভাবে