আজকে আমরা চলে এসেছি ব্যায়াম সিরিজের দ্বিতীয় পর্বে। এর আগে গত সংখ্যায় প্রথম পর্বে আলোচনা করেছিলাম দড়ি লাফ খেলার আদ্যোপান্ত নিয়ে। [প্রথম পর্বটি পড়ে নাও এখান থেকে]
দ্বিতীয় পর্বে আজ আমরা আলোচনা করব ‘পুশ আপ’ নিয়ে। মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে ব্যায়াম করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কয়েকটা কথা বলা দরকার। কেন তুমি নিয়মিত ব্যায়াম করবে? কারণ হলো, ব্যায়াম বা খেলাধুলা বাদ দিলে তুমি অন্য এমন কিছুতে টাইম পাস করবে, যা তোমার জন্য অকল্যাণকর হতে পারে। যেমন- স্মার্টফোন বা ডিভাইস আসক্তি। ডিভাইস বা স্মার্টফোন আসক্তির কারণে মনের ভেতর বাসা বাঁধে একাকিত্ব, বিষণ্ণতা ও হতাশার মতো ভয়ংকর সব ব্যাধি। তাই সুস্থ থাকার জন্য, শরীরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার বিকল্প নেই।
এবার মূল আলোচনায় আসি। তোমরা কেউ কি ‘পুশ আপ’ নামক ব্যায়াম চেনো? কেউ কেউ হয়তো চেনো। তবে এটার একটা খুব পরিচিত নাম আছে। তা হলো ‘বুক ডন’! এবার হয়তো অনেকেই চিনেছ, তাই না? আজকে আমরা এই বুক ডন তথা পুশ আপের কলাকৌশল ও উপকারিতা নিয়েই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথমে পুশ আপের উপকারিতা বলি। তাহলে এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। এরপর কীভাবে পুশ আপ করবে তা বলব।
পুশ আপের উপকারিতা :
১. পুশ আপ করলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
২. এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করে।
৩. এর মাধ্যমে মানসিক শক্তি দৃঢ় হয়।
৪. পুশ আপ করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
৫. গলা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি মাংসপেশী শক্তিশালী হয়ে উঠে।
৬. সারা শরীরের ব্যায়াম হয়।
৭. শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৮. মাংসপেশীর ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৯. শরীরের উপরিভাগের ক্ষমতা বাড়ে।
উপকারিতা তো জানলে। এখন নিশ্চয়ই পুশ আপ দিতে ইচ্ছে করছে! তাহলে চলো জেনে নিই, কীভাবে পুশ আপ দেবে এবং কী কী বিষয়ে এড়িয়ে চলবে।
যেভাবে পুশ আপ দেবে :
১. পুশ আপ দেওয়ার জন্য প্রথমেই একটি শক্ত ও সমতল জায়গা বেছে নেবে।
২. পুশ আপ দেওয়ার জন্য তোমার দুই হাতের দূরত্ব দুই কাঁধের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়ে সামান্য বেশি নেবে।
৩. পা দুটো সামান্য ফাঁকা রাখবে। খুব বেশি ফাঁকা করবে না, আবার একসাথে মিশিয়েও দেবে না।
৪. পুশ আপ দেওয়ার সময় হাঁটু ভাঁজ করবে না এবং নিতম্ব ওপর-নিচ করবে না।
৫. পুরো শরীরকে একটি সরলরেখার মতো সোজা রাখবে।
৬. পুরো শরীর একসাথে নিচের দিকে নামাবে। ভূমির সাথে প্রায় লাগোয়া করে নেবে। কিন্তু খেয়াল রাখবে, তোমার হাতের নিচের অংশ যেন ভূমির সাথে ঠিক লম্বভাবে থাকে।
৭. এরপর পুশ ব্যাক করে পুরো শরীর একসাথে ওপরের দিকে তুলে নেবে।
৮. পুশ আপ দিয়ে নিচে নামার সময় শ্বাস নেবে। আর ওপরে উঠার সময় শ্বাস ছাড়বে। এই ব্যাপারটা ভালোভাবে খেয়াল রাখবে।
৯. পুশ আপ দেওয়ার সময় খুব দ্রুত উঠানামা কোরো না। ধীরে ধীরে শরীরকে ওপরে উঠাবে, আবার ধীরে ধীরেই নিচে নামাবে।
১০. প্রথম প্রথম পুশ আপ দেওয়ার সময় তোমার অনেক কষ্ট হতে পারে। হয়তো একটিও দিতে পারবে না। একদম পারফেক্টভাবে পুশআপ দিতে হবে এমন না। যেভাবে পারো, যতটা পারো দেওয়া শুরু করো। শুরুতেই ৩০/৪০ টা পুশআপ দেওয়া লাগবে না তোমার। ১/২টা করে দিয়ে শুরু করো। এরপর আস্তে আস্তে সংখ্যা বাড়াও।
১১. পুশ আপ শেখার জন্য দেখতে পারো এই টিউটোরিয়ালটি।
এভাবে নিয়মিত পুশ আপ অনুশীলন করে যাবে। নিয়মিত করে যেতে পারলে একসময় তোমার শরীরের পরিবর্তন নিজেই টের পাবে। পাশাপাশি মানসিকভাবেও আরও দৃঢ় ও সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
মজার ব্যাপার হলো, পুশ আপ দেওয়ার জন্য কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। একদম খালি হাতেই পুশ আপ দেওয়া যায়। ঘরের বাইরেও যাওয়া লাগে না। তাই রোদ-বৃষ্টি-ঝড় কিংবা বাইরে যাওয়ার আলসেমি তোমার পুশ আপের রুটিনে একদমই বাধা হতে পারবে না।
So, কথা কী থাকল? পুশ আপ দিয়ে বডি বানাইতে হপ্পে! ওকে?