আজকাল তোমাদের অনেকের মুখেই একটা কথা শুনি। আমার কিছু ভালো লাগে না, পড়তে ইচ্ছে করে না, খেতে ইচ্ছে করে না, কিছু করতে ইচ্ছে করে না, এমনকি রাতে ঘুমাতেও ইচ্ছে করে না, ঘুম ধরে না। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার না হতেই একাকিত্ব, বিষণ্ণতা, হতাশায় আক্রান্ত হতে দেখেছি তোমাদের অনেককেই। এসব কেন হয় জানো?
অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে তোমাদের স্মার্টফোন আসক্তি। আর এই আসক্তির কারণ খেলাধুলা না করা, বাইরের পরিবেশে সময় না কাটানো।
সুস্থ থাকার জন্য, শরীরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার বিকল্প নেই। স্মার্টফোনের আনস্মার্ট আসক্তি থেকে তোমাদেরকে সুস্থ চিত্তবিনোদনের জগতে ফিরিয়ে নিতেই আমরা শুরু করছি ব্যায়াম সিরিজ। এই সিরিজে আমরা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন খেলা ও ব্যায়ামের কলাকৌশল ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
ব্যায়াম সিরিজের প্রথম পর্বে আজ আলোচনা করব দড়ি লাফ খেলা নিয়ে। তোমরা এই খেলার নাম শুনেছিলে আগে? কেউ কেউ হয়তো শুনেছ। তবে খুব কমই হয়তো খেলেছ। আজকে আমরা দড়ি লাফের কলাকৌশল ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
প্রথমে দড়ি লাফের উপকারিতা বলি। তাহলে এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। এরপর এর জন্য কী কী লাগবে তা বলব।
দড়ি লাফের উপকারিতা
১. টেনশন, ভয় ভীতি, হতাশা, মনখারাবি কমায়। শরীর ও মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
২. এটি মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৩. শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে, মনোবল বৃদ্ধি করে।
৪. দীর্ঘ পরিশ্রম করার শক্তি বৃদ্ধি করে, ক্লান্তি দূর করে।
৫. শরীরকে শান্ত এবং নমনীয় করে তোলে। এ কারণেই ক্রীড়াবিদেরা তাদের ওয়ার্কআউট সেশনে সব সময় এটিকে রাখেন।
৬. দড়ি লাফ হলো সেরা কার্ডিও ব্যায়াম। এটি হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
৭. দেহের চর্বি ঝরাতে দড়ি লাফের জুড়ি নেই।
৮. এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। ফলে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি কমে।
৯. ত্বক সুস্থ রাখে এবং ত্বকের লাবণ্যতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
১০. দেহের রক্ত সঞ্চালন এবং শ্বাসক্রিয়া বৃদ্ধি করে। ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
উপকারিতা তো জানলে। এখন নিশ্চয়ই খেলতে ইচ্ছে করছে! তাহলে চলো জেনে নিই, দড়ি লাফের জন্য কী কী লাগবে এবং কীভাবে খেলবে।
যা যা লাগবে
দড়ি লাফ খেলার জন্য একটি ভালো দড়ি হলেই হবে। পয়েন্ট টু বি নোটেড, ভালো দড়ি। টাকা বাঁচানোর জন্য সস্তা দড়ি কিনবে না।
যেভাবে খেলবে
১. দড়ি লাফ খেলার জন্য প্রথমেই একটি নরম ও সমতল জায়গা বেছে নেবে।
২. খালি পায়ে না খেলার চেষ্টা করবে।
৩. লাফ দেওয়ার সময় পায়ের আঙুলের ওপর ভর দেবে। পুরো পায়ে ভর দেবে না। তাতে ইনজুরির সম্ভাবনা রয়েছে।
৪. প্রথমে দড়ি ছাড়াই খালি হাতে কিছুক্ষণ লাফ দিয়ে নেবে।
৫. এরপর দড়িসহ প্রথমে একবার করে লাফ দেবে। তারপর বিরতি নেবে। এভাবে কয়েকবার করার পর দুইবার করে দেবে। এরপর তিনবার করে। এভাবে লাফের সংখ্যা বাড়াবে।
৬. প্রথমে ধীরে ধীরে লাফ দিবে। অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে স্পিড বাড়াবে।
সতর্কতা
দড়ি লাফ খেলার সময় অনেকেই কমন কিছু ভুল করে থাকে। ভুলেও এই ভুলগুলো করবে না তুমি।
১. শক্ত জায়গায় (যেমন- ফ্লোর, পাকা রাস্তা ইত্যাদি) দড়ি লাফ খেলবে না। ঘরের ভেতর খেলতে হলে অবশ্যই ফ্লোরের ওপর নরম কার্পেট বা মাদুর জাতীয় কিছু বিছিয়ে নেবে। অন্যথায় ইনজুরি হবার সম্ভাবনা আছে।
২. অবশ্যই ভালো মানের দড়ি ব্যবহার করবে। সস্তায় পাওয়া হালকা দড়ি ব্যবহার করবে না।
৩. অনেকে মাপ ছাড়াই লম্বা দড়ি ব্যবহার করে। এতে ঠিকঠাক লাফ দেওয়া যায় না। তোমার উচ্চতা অনুযায়ী সঠিক মাপের দড়ি ব্যবহার করবে। পায়ের নিচে দড়ি আটকিয়ে দড়ির হাতল দুটি বুকসমান হয় কি না দেখবে। এভাবে বুকসমান দড়িই হবে তোমার জন্য পারফেক্ট মাপের দড়ি।
৪. লাফ দেওয়ার সময় সম্পূর্ণ হাত ঘুরাবে না। এতে দ্রুত ক্লান্তি চলে আসবে। তাই কনুই ও কাঁধ না ঘুরিয়ে শুধু কব্জি ঘুরাবে। এতে বেশি সময় লাফ দিতে পারবে।
৫. অনেকেই বড় বড় লাফ দেয়। এতেও দ্রুত ক্লান্তি চলে আসে। এরকম করবে না। ছোট ছোট লাফ দেবে। মাটির সাথে পায়ের দূরত্ব কম রাখবে।
৬. লাফ দেওয়ার সময় হাঁটু বেশি ভাজ করবে না। হালকা ভাজ করবে। পায়ের পাতার সামনের অংশে ভর করে লাফ দেবে।
৭. শুরতে দুদিন দড়ি লাফ খেলার পর তৃতীয় দিন বিশ্রাম নেবে। এরপর আবার দুদিন খেলবে; পরদিন বিশ্রাম নেবে। এভাবে দড়ি খেলা চালু রাখবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট দড়ি লাফ খেলবে।
৮. দড়ি লাফ শেখার জন্য দেখতে পারো এই টিউটোরিয়াল দুটি-
এই ছিল দড়ি লাফ খেলার ব্যাকরণ। মজার ব্যাপার কী জানো? দড়ি লাফ খেলার জন্য ঘরের বাইরেও যাওয়া লাগে না। তাই রোদ-বৃষ্টি-ঝড় কিংবা বাইরে যাওয়ার আলসেমি দড়ি লাফের রুটিনে বাধা হবে না। কোথাও বেড়াতে গেলেও ব্যাগে করে দড়ি নিয়ে যেতে পারবে। তাই তোমার ব্যায়ামের রুটিন কখনোই মিস হবে না।
So, কথা কী থাকল? খেলা হবে!