ষোলোতে লিখতে বলা হয়েছে। ইনবক্সে টুকি দেওয়া ষোলো ভাইয়া উৎসাহ যোগাতে বলেও দিয়েছেন, ‘সেই’ একটা লেখা না কি হবে আমার। আমি তো জানি, কী সেই আর সুই লেখা দেব আমি। হিহিহি! লেখার টপিক বের করতেই ঘাম বেরোয়, আর সেখানে না কি সেই লেখা আসবে!
যাকগে, এরকম হাবিজাবি হিজিবিজি ভাবতে ভাবতেই আল্লাহর ইচ্ছায় খালি মাথায় টোকা দিল একখানা আইডিয়া। লিখতেই যখন বলা হয়েছে, তখন লেখা নিয়েই কেন কিছু লিখে ফেলি না? তোমরা নিশ্চয়ই অনেকে ষোলোতে তোমাদের লেখা পাঠাতে চাও, হয়তো পাঠাও-ও। কিন্তু কিছু গাইডলাইনের অভাবে হয়তো সেগুলো ম্যাগাজিনের পাতায় উঠে না, আর তোমাদেরও মনটা খারাপ হয়ে যায়।
কিন্তু মন তো খারাপ করা যাবে না কোনোভাবেই। মনকে এখানে কড়া করে বলে দিতে হবে, যাতে করে সে খারাপ না হয় একদমই। কারণ, সে খারাপ হয়ে গেলেই কিন্তু বিপদ! তখন সে কিন্তু আর তোমাকে কাজ করার জন্য তেল সাপ্লাই একদমই বন্ধ করে দেবে। অতএব, নো মন খারাপ। মন খারাপকে না বলি - এই হোক আমাদের স্লোগান। ওকে?
লেখালেখি আসলে একটা আর্ট
এবার কাজের কথায় আসা যাক। লেখালেখি আসলে একটা আর্ট। আর যেকোনো আর্ট একদিনে রপ্ত হয়ে যাবে, এমনটা তো আর হয় না। এজন্য খাটাখাটনি দরকার, দরকার ইচ্ছে, আগ্রহ আর উৎসাহের বান্ডিল। তাই চলো দেখি মাথার নিউরন সেলগুলোকে খাটিয়ে মেরে কিছু আইডিয়া আমরা বের করে ফেলতে পারি কি না।
লেখক যদি হতে চাও পড়ুয়া হও আগে
একদম এক নাম্বারে যেটা আমাদের দরকার সেটা হলো গোগ্রাসে বই পড়বার ক্ষুধা। লেখক যদি হতে চাও, তবে পড়ুয়া হও আগে। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ইত্যাদি ইত্যাদি যাই-ই সামনে পাবে, একদম গোগ্রাসে গিলে ফেলবে।
এহেম এহেম! অবশ্য আবার উটপাখির মতো যা তা খেয়ে ফেলো না যেন! আমরা গোগ্রাসে তো গিলব অবশ্যই, কিন্তু সেগুলো হবে ভালো ভালো সব বই।
পরামর্শ নিয়ে পড়বো শুধু উপকারী বই
ভালো বই কোনগুলো? ভালো বই বলা যায় সেই বইগুলোকেই, যে বইগুলো থেকে আমরা সত্যবাদিতা, আমানতদারীতা, সোনালি যুগের সোনালি মানুষদের গল্প আর ইসলামের নৈতিকতার নির্মল পাঠ খুঁজে পাই। ভালো বই চিনতে হলে আর চিনে চিনে পড়তে হলে অবশ্যই আমাদের কারও না কারও পরামর্শের দরকার পড়বে। সেক্ষেত্রে তোমার বড় ভাইবোন যারা বই নিয়ে জানেন, যারা ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম পালন করেন, উন্নত চরিত্রের অধিকারী- তাঁদের কাছ থেকে অবশ্যই জেনে নিবে কোন কোন বই তোমার পড়া উচিত আর কোনগুলো উচিত না।
নবি-রাসূলদের সীরাহ, সাহাবিদের জীবনী দিয়ে শুরু করতে পারো পড়া। এরপর অন্য বই ধরতে পারো ইনশাআল্লাহ।
তো যাই হোক, পড়তে হবে একদম বাঘের ক্ষুধা নিয়ে। যে যত বেশি পড়ে, তার লেখার হাত ততই ভালো হতে থাকে। এটা খুব মজার একটা ট্রিকস। পড়ে পড়ে তো সে অনেক কিছু শিখলই, সাথে বোনাস হিসেবে শিখে ফেলল কীভাবে নিজের মনের কথাগুলোকে সুন্দর করে কালির আঁচড়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে হয়। নামজাদা লেখকরা তাই লেখা শেখার প্রথম সাজেশন হিসেবে বই পড়ার কথাই বলেন।
তা হলে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পড়ার ভুবনে ডুব দেওয়ার শুরুটা এবার করে দেওয়া যায়, না কি?
কল্পনার চোখে দেখো অদেখা দুনিয়া
আচ্ছা, কখনো কি এমন হয়েছে যে, বইয়ের পাতায় পড়া দৃশ্যগুলো মনের চোখে দেখতে পেয়েছ? কঠিন মনে হলো? আচ্ছা, ভেঙেই বলি না হয়।
ধরো, একটা গল্পের বই। কোনো এক দুর্দান্ত যোদ্ধাপুরুষ, ঘোড়ায় চড়ে তিরবেগে এগিয়ে যাচ্ছে শত্রুর দিকে। কিংবা মনে করো, কোনো এক সাহসী নাবিক, ঝড় উঠা সাগরের উথালপাথাল ঢেউয়ের তোপের মধ্যে শক্ত হাতে সামলে রেখেছে তার ছোট্ট তরী। আবার ধরো, কোনো এক দুঃসাহসী অভিযাত্রী যে কি না দুর্লঙ্ঘ পাহাড় বেয়ে উঠছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে...
‘Visualization’ ক্ষমতা বাড়াতে হবে
এসব যখন পড়ো, তখন কি এই দৃশ্যগুলো তোমাদের চোখের সামনে ভাসে? তোমরা কি কল্পনার চোখে দেখতে পাও যে তারা যুদ্ধ করছে, সমুদ্রে টিকে থাকার লড়াই করছে কিংবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে উঠছে? যদি দেখতে পাও তবে তোমাদের অভিনন্দন। তোমরা সেই কাজটি করতে পেরেছ, লেখালেখির জন্য যেটা বেশ জরুরি বলে আমার কাছে মনে হয়। ইংলিশে যে কাজটাকে বলা ‘Visualization’। এই মনের চোখে দেখবার কাজটা একজন লেখক হয়ে উঠবার পথে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
যত ভালোভাবে এই কাজটা করতে পারবে, তত বেশি তোমার মনের ভাব লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারবে। তত বেশি তোমার লেখায় পরিপূর্ণতা আসবে, তোমার লেখা তত বেশি জীবন্ত হয়ে উঠবে। যত বেশি কোনো কিছুকে অনুভব করবে, ফিল করবে, তত বেশি তোমার লেখা পাঠকের কাছে মজা লাগবে। পাঠক তোমার লেখায় স্বাদ পাবে। তখন হবে কী জানো?
বড় বড় লেখকদের এই এক গুণ। তারা নিজেরা যা দেখেন, পাঠককেও তাই দেখাতে পারেন। তারা তাদের লেখাটাকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে, পাঠক তখন ঠিক তা-ই দেখতে শুরু করে যা লেখক তাকে দেখাতে চেয়েছেন।
তাই মনের চোখে দেখতে হবে বেশি বেশি। যা লিখবে, ধরো যদি সেটা কোনো কিছুর বর্ণনা হয়, তা হলে সেটাকে কল্পনায় দেখতে চেষ্টা করবে। তুমি সেটাকে কল্পনায় যেভাবে দেখছ, সেভাবেই সেটাকে তোমার লেখায় ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। দেখবে, তোমার লেখা পড়ে অন্যরা তো মজা পাচ্ছেই, তুমি নিজেও মজা পাচ্ছ।
কিন্তু এটা কি একদিনেই হয়ে যাবে? উহু! মোটেই না। প্রথমে পড়তে হবে, পড়ে পড়ে সেসব নিয়ে ভাবতে হবে, মনের চোখে দেখার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে দেখবে তোমার মনের জগতটাও বড় হবে আর সাথে সাথে বাড়বে সেই জগতটাকে মনের চোখে দেখতে পারার শক্তি। তখন দেখবে তোমার লেখা অন্য রকম হবে। তোমার লেখায় তখন প্রাণ থাকবে, অন্য রকম একটা টেস্ট থাকবে। সুস্বাদু, মজাদার লেখা যাকে বলে আরকি!
তো কি বলো? শুরু হয়ে যাক প্র্যাকটিস, না কি?
পরের পয়েন্ট এ যাই… ও কী! ষোলো ভাইয়া আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছ কেন? মারবে নাকি! ও আচ্ছা! মনে পড়েছে আমার জন্য ষোলোতে বরাদ্দ পৃষ্ঠা শেষ। আচ্ছা, ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া, আর ভুলব না। মাফ করে দাও। মেরো না। এই আমি মুখে চেইন লাগালাম।
(চলবে ইনশাআল্লাহ..)